প্রতিকুল পরিস্থিতিতে ফেসবুক উদ্যোক্তারা কি কি করতে পারেন

  • July 31, 2024
  • vsnadmin
  • 1 min read

দেশের উদ্যোক্তাগন বিশেষ করে ফেসবুক ভিত্তিক ব্যাবসা বা এফকমার্স যাদের রয়েছে তাদের মাঝে মধ্যেই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যেমন রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ডাটাসেন্টারের টেকনিক্যাল ইস্যুর জন্য মাঝে মধ্যেই ফেসবুক ভিত্তিক ব্যাবসা বন্ধের উপক্রম হয়। সাথে ফেসবুকের টেকনিক্যাল ইস্যু যেমন পেইজ রেষ্ট্রিকটেড হওয়া, পেইজ হ্যাক হয়ে যাওয়া, রিচ কমে যাওয়া সহ নানান সমস্যা তো রয়েছেই। তবে রিসেন্টলি ইন্টারনেট একদম বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অনেককেই বেশ ভাবিয়ে তুলেছে, তাই এই লেখার অবতারনা। সবচেয়ে বড় সত্যি কথা হচ্ছে আপনি বেচে থাকলে আপনার জীবন চলবে আর যেহেতু আপনি অনালাইনে ব্যাবসা করছেন তাই ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সকল খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমি কিছু বিষয় নিচে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরছিঃ

০১. প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে যে অনলাইন ব্যাবসা মানেই শুধু ফেসবুকে বেচা-কেনা করা নয়। ফেসবুক একটা সেলস চ্যানেলের মত, আপনি আপনার প্রডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচার করতে পারবেন কিন্তু সকল যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু কখোনই ফেসবুক হতে পারে না। কারন আপনার ফেসবুক পেইজটি হয়তো বেশ পুরোনো এবং অনেক মানুষ সংযুক্ত আছেন কিন্তু এই পেইজটি যে কোনো কারনে ডিজেবল বা হ্যাক হয়ে যেতে পারে। এর মানে কি আপনি আর ব্যাবসা করবেন না!

০২. আপনি একটি ডোমেইন এবং হোষ্টিং কিনে স্বল্পপরিসরে ইকমার্স ওয়েবসাইট বানিয়ে নিতে পারেন। তবে সেটা প্রথমেই যে পুরোপুরি ইকমার্স ওয়েবসাইট হতে হবে কথা নেই, আগে আপনার প্রডাক্ট বা সার্ভিসের বিবরন, দাম এবং যোগাযোগের নাম্বার দিয়ে রাখতে পারেন। এখন অনেক কোম্পানী আছে যারা মোটামুটি নামমাত্র মুল্যে বেসিক ওয়েবসাইট বানিয়ে দিতে পারে। আপনার হয়তো বিষয়গুলো প্রথমে বুঝতে কষ্ট হতে পারে তবে এই বিষয়গুলো যত বেশী সংখ্যক মানুষের সাথে কথা বলবেন ততই আপনার ধারনা পরিস্কার হবে, এটা কোন রকেট সাইন্স না আর রকেট ও কিন্তু মানুষের তৈরী তাই না?

০৩. আপনি আপনার পন্য যেখানেই বিক্রি বা প্রচার করুন না কেনো সকল কিছুর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আপনার ওয়েবসাইট কে রাখার কথা মাথায় রাখুন। এটা হয়তো একদিনে হবে না, কিন্তু শুরু করলেই দেখবেনে আস্তে আস্তে সেই অনুযায়ী আপনার সবকিছুর প্যাটার্ন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।

০৪. আর একটি চমৎকার সেলস চ্যানেল হচ্ছে YouTube যেখানে আপনি চাইলে একটু লং ভিডিও বা শর্টস আপলোড করতে পারবেন। আপনি এখানে যা ই আপ্লোড করুন না কেনো সব যায়গায় আপনার ওয়েবসাইট এর লিঙ্ক দিয়ে রাখবেন। ইউটিউব সার্চ এবং রিল্ভেন্ট ভিডিও থেকে প্রচুর সম্ভাব্য ক্রেতা আপনি পেতে পারেন তবে এটা করতে চাইলে আপনাকে বেসিক বেশ কিছু বিষয়ে জানতে এবং অভ্যাস্ত হতে হবে। আমি ধরে নিচ্ছি আপনি একদমই নতুন এই বিষয়গুলো নিয়ে আপাতত বিস্তারিত লিখলাম না।

০৫. গুগল সার্চ এর মাধ্যমে আপনি চাইলে বেশ কিছু সম্ভাব্য কাষ্টমার পেতে পারেন তবে এই বিষয়ে আপাতত নজর না দিলেও চলবে। শুধু একটা কাজ করবেন, আপনার সাইটে যে লেখা বা প্রডাক্টের যে বিবরন ই দিন না কেনো নিজের মত লিখে দেয়ার চেষ্টা করবেন।

০৬. গুগুলের বিজ্ঞাপন দিয়ে আপনি আপনার পন্য বা সেবার প্রচার করতে পারেন। অনেক এজেন্সি রয়েছে যারা আপনাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবে। আর আপনার ডুয়াল কারেন্সি কার্ড থাকলে আপনি নিজেও এটি করতে পারবেন। সবসময় ই আপনার চোখ কান খোলা রাখুন এবং বুঝতে ও শিখতে চেষ্টা করুন বিষয়গুলো কিভাবে কাজ করে। আজ হয়তো আপনি নতুন কিন্তু ৩ মাস বা ৬ মাস পরে আপনি এসব বিষয়ে মোটামুটি বিশেষজ্ঞ হয়ে যেতে পারেন যদি শুধু মাত্র আপনার ইচ্ছাশক্তির দ্বারা।

০৭. LinkedIn কে আমরা অনেকসময় এড়িয়ে চলি কিন্তু এটা অনেক শক্তিশালী একটি প্লাটফর্ম, আপনি চাইলে আপনার প্রতিষ্টানের নামে এখানে পেইজ খুলতে পারবেন এবং আপনার নিজের প্রোফাইল থেকেও আপনি প্রচারনা চালাতে পারবেন। চেষ্টা করবেন যত বেশী সংখ্যক মানুষের সাথে যুক্ত থাকা যায় ততই ভালো।

০৮. আর একটি প্লাটফর্ম আছে যার নাম Instagram, এটা ফেসবুকের মূল কোম্পানী Meta র হলেও ফেসবুকের সাথে এর মূল পার্থক্য হচ্ছে এখানে ছবি এবং ভিডিও প্রাধান্য পায়। তাই সুন্দর এবং আকর্ষনীয় ছবি বা ভিডিও দিতে পারলে এখানেও সাড়া পাবেন, তবে এখানেও আপনার ওয়েবসাইটের প্রচারনা করতে ভুলবেন না।

০৯. আপনি চাইলে TikTok ব্যাবহার করে দেখতে পারেন, টিকটক এর ব্যাপ্তি এখন অনেক, সাথে সম্ভাবনাও বিশাল – শুধু বুদ্ধি করে ব্যাবহার করতে হবে।

১০. এক্স (সাবেক টুইটার) এর ব্যাপ্তি এবং গ্রহনযোগ্যতা এখনো বিশ্বব্যাপি। আপনার প্রডাক্ট বা সার্ভিস যদি গ্লোবাল হয় তাহলে সঠিকভাবে এক্স ব্যাবহার করতে জানলে এখানেও ভালো ফলাফল আশাকরা যায়।

১১. এরপরে আসি মার্কেটপ্লেস নিয়ে যেমন আজকের ডিল, প্রিয়শপ বা দারাজ। আপনি এখানে আপনার পন্যের লিষ্টিং করতে পারবেন, তবে মার্কেটপ্লেসে অনেকসময় দামের ব্যাপারে প্রচুর প্রতিযোগিতায় পরতে হয়। এক্ষেত্রে আপনি সিঙ্গেল প্রডাক্ট বিক্রি না করে প্যাকেজ বা বান্ডেল প্রডাক্ট বিক্রি করতে পারেন। এখানেও আপনি চাইলে আপনার ক্রেতাদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন।

১২. আর একটি যায়গা আছে যেটাকে বলে ক্লাসিফাইড সাইট, যেমন ক্লিকবিডি ডট কম বা বিক্রয় ডট কম। এই টাইপের সাইটগুলো নতুন এবং পুরাতন জিনিস বিক্রি করা যায়, এখানে আপনি আপনার প্রডাক্ট সাজিয়ে রাখতে পারেন।

১৩. আপনার কাষ্টমারদের তথ্য রাখার জন্য কোনো জটিল সফটওয়ারের আপাতত দরকার নেই, সিম্পল এক্সেল বা গুগল শিট ব্যাবহার শুরু করুন, এই ডাটা আপনাকে অনেক কাজে দেবে।

১৪. আপনার গ্রাহকদের মোবাইল নাম্বারে আপনি এসএমএস পাঠাতে পারেন। এটা আপনার মোবাইল দিয়েও পাঠাতে পারেন তবে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের মাধ্যমে আপনি বাল্ক এসএমএস পাঠাতে পারবেন। কাষ্টমারদের রেগুলার এসএমএস পাঠানো একটি ভালো প্রাকটিস, এর ফলে আপনার রিটার্নিং কাষ্টমার বাড়বে।

১৫. যাদের মোবাইল নাম্বার রয়েছে তাদেরকে কল করে নিত্যনতুন ডিসকাউন্ট/প্যাকেজ অফার করতে পারবেন।

১৬. এছাড়াও যাদের ইমেইল ঠিকানা রয়েছে তাদের আপনি ইমেইল পাঠাতে পারবেন, কাষ্টমার আপনার ওয়েবসাইটে গিয়ে এবং কল করে অর্ডার করতে পারবেন।

একটা ইন্টারেষ্টিং বিষয় হচ্ছে যে ইন্টারনেট যদি না ও থাকে তাহলেও আপনি চাইলে কল করে বা এসএমএস করে কিছু সেল করার চেষ্টা করতে পারবেন। এটা সবসময় কাজে না দিলেও যখন কোনো উপায় থাকবে না তখন চুপচাপ না বসে থেকে কিছু করার চেষ্টা অন্তত করা যাবে। মনে রাখবেন অনলাইন বিজনেসে শেখার রয়েছে অনেক কিছু তাই নিত্যনতুন বিষয়ের সাথে নিজেকে আপডেট রাখতে পারলে আপনার সফলতা শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।

আসাদ ইকবাল
কম্পিউটার প্রকৌশলী ও উদ্যোক্তা
ফাউন্ডার, ডিরেক্টর এবং সিইও, ভার্চুয়ানিক সল্যুশনস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Open chat
Need Help?
Welcome to Virtuanic Solutions, thank you for reaching us!